বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৩১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
সাংবাদিক নিপীড়নের ঘনঘটা, সাংবাদিকতায় শ্বাসরোধ দাকোপে সাইক্লোন শেল্টার ম্যানেজমেন্ট কমিটির কর্মশালা অনুষ্ঠিত সঠিক খাদ্যাভ্যাসে কমে উচ্চ রক্তচাপ ঝুঁকি বিশ্ব খাদ্য দিবসের ওয়েবিনারে বক্তারা পিরোজপুরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মানববন্ধন কর্মসূচি পালন জামায়াতে ইসলামি টাকা-পয়সার অপব্যবহার না করে অল্প খরচে নির্বাচন চায় : শামীম সাঈদী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জরুরি বৈঠকে ঐকমত্য কমিশন যমুনা ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিয়ে শাহবাগ ছাড়লেন শিক্ষকরা আশাশুনি প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনে দু’দিন মোট ১৬ জনের মনোনয়ন ক্রয় চাকসু নির্বাচনে সিলবিহীন ব্যালট ও অমোচনীয় কালি ঘিরে অনিয়মের অভিযোগ প্রধান উপদেষ্টা ও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট রোমে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে গ্লোবাল অ্যালায়েন্সের কার্যালয় উদ্বোধন করেছেন
শিরোনাম
যমুনা টিভির সৌজন্যে লাইভ চলছে...
কুষ্টিয়ায় হারানোর পথে গ্রামবাংলার প্রতীক ঐতিহ্যবাহী ধানের গোলা
/ ৪৮ টাইম ভিউ
আপডেট : বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৮:৪৭ পূর্বাহ্ন

মুকুল খসরু কুষ্টিয়া থেকে: কুষ্টিয়ায় হারানোর পথে গ্রামবাংলার প্রতীক ঐতিহ্যবাহী ধানের গোলা। আগের নামকরা গেরস্থ বলতে,মাঠ ভরা সোনালি ফসলের ক্ষেত, গোয়াল ভরা গরু পুকুর ভরা মাছ ও কৃষকের গোলা ভরা ধান এখন প্রবাদ বাক্যে পরিণত হতে চলেছে।গ্রামবাংলার সমৃদ্ধির প্রতীক ধানের গোলা এখন বিলুপ্ত প্রায়। হারিয়ে যাচ্ছে কৃষিক্ষেত ও কৃষকের ঐতিহ্যবাহী গোলা।মাঠের পর মাঠ ধান ক্ষেত থাকলেও অধিকাংশ কৃষকের বাড়িতে নেই ধান মজুদ করে রাখার বাঁশ বেত ও কাদা দিয়ে তৈরি গোলাঘর।অথচ এক সময় সমাজের নেতৃত্ব নির্ভর করত কার ক’টি ধানের গোলা আছে এই হিসেব কষে। কন্যা পাত্রস্থ করতেও বর পক্ষের বাড়ী ধানের গোলার খবর নিতো কনে পক্ষের লোকজন। যা এখন শুধু কল্পকাহিনী।গ্রাম অঞ্চলে বাড়িতে বাড়িতে বাঁশ দিয়ে গোল আকৃতির তৈরী করা ধানের গোলা বসানো হতো উঁচুতে। গোলার মাথায় থাকত টিনের তৈরী মিশরের পিরামিড আকৃতির টাওয়ার। যা দেখা যেত অনেক দুর থেকে। গ্রাম অঞ্চলে বাড়িতে বাড়িতে বাঁশ, বাঁশের বাতা ও কঞ্চি দিয়ে প্রথমে গোল আকৃতির কাঠামো তৈরি করা হত। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বর্গ অথবা আয়তক্ষেত্র আকারে গোলা তৈরি করা হত। এর পর তার গায়ে ভিতরে ও বাহিরে বেশ পুরু মাটির আস্তরণ লাগানো হত। এর মুখ বা প্রবেশ পথ রাখা হত বেশ উপরে (ধান বাহির করার জন্য অনেকে নিচে বিশেষ দরজা রাখতেন) যেন চোর/ডাকাতরা চুরি করতে না পারে। ধানের গোলা বসানো হতো উঁচুতে। গোলার মাথায় থাকত বাঁশ ও খড়ের তৈরি বা টিনের তৈরী ছাউনি । যা দেখা যেত অনেক দুর থেকে। গোলা নির্মাণ করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় আগে দক্ষ শ্রমিক ছিল। এখন আর দেশের বিভিন্ন জেলা শহর থেকে আসা গোলা নির্মাণ শ্রমিকদের দেখা মেলে না। পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন।গোলা নির্মাণের জন্য তাদের সংবাদ দিয়ে আনতে হত। তারা এসে নানা পরামর্শ করে( মাটি পর্যবেক্ষণ, জায়গা নির্ধারণ) নির্মাণ কাজে হাত দিত। একেকটা গোলা নির্মাণ খরচ পড়ত তার আকার ও শ্রমিক কত লাগবে তার উপর নির্ভর করে। তবে একেকটা গোলা নির্মাণ খরচ পড়ত সেই সময়কার ১০-৩০ হাজার টাকা।বর্ষার পানি আর ইঁদুর তা স্পর্শ করতে পারত না। মই বেয়ে গেলায় উঠে তাতে ফসল রাখতে হতো। এই সুদৃশ্য গোলা ছিল সম্ভ্রান্ত কৃষক পরিবারের ঐতিহ্য। সে সময় ভাদ্র মাসে কাদা পানিতে ধান শুকাতে না পেরে কৃষকরা ভেজা আউশ ধান রেখে দিতো গোলা ভর্তি করে।গোলায় শুকানো ভেজা ধানের চাল হত শক্ত। কিন্তু সম্প্রতি রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও আধুনিক কলের লাঙ্গল যেন উল্টে পাল্টে দিয়েছে গ্রাম অঞ্চলের চালচিত্র। গোলায় তোলার মত ধান আর তাদের থাকে না। গোলার পরিবর্তে কৃষকরা ধান রাখা শুরু করে বাঁশের তৈরী ক্ষুদ্রাকৃতি ডোলায়। ধান আবাদের উপকরন কিনতেই কৃষকের বিস্তর টাকা ফুরায়। কৃষকের ধানের গোলা ও ডোলা এখন শহরের বিত্তশালীদের গুদাম ঘরে পরিণত হয়েছে। কৃষকের ধান চলে যাচ্ছে একশ্রেণীর অসাধু মুনাফালোভী ফড়িয়া ও আড়ত ব্যবসায়ীর দখলে। ইট বালু সিমেন্ট দিয়ে পাকা ইমারত গুদাম ঘরে মজুদ করে রাখা হচ্ছে হাজার হাজার টন ধান চাল। অনেক ক্ষুদ্র কৃষক বস্তা ও বেরেল ভর্তি করে রাখছে আউশ, আমন ও বোরো মৌসুমে উৎপাদিত ধান চাল কাছে গল্প শুনতাম তাদের পূর্ব পুরষদের গোলাভরা ধান চালে চলতো এলাকার ১০-১৫টি গ্রামের মানুষের জীবন জীবিকা। গোলাভরা ধান ও পুকুর ভরা মাছই ছিল জমিদারি প্রথা ও উচ্চ চাষী পরিবারের ঐতিহ্য। পূর্ব পুরষের রেখে যাওয়া গোলাঘরে ধান চাল ওঠানো-নামানো হতো গরু গাড়িতে করে। এটা এখন কল্পকাহিনীতে পরিণত হয়েছে। একটা গোলা ঘরে গর গাড়ী প্রবেশ করতে পারে বিশ্বাস করতে নারাজ এই প্রজন্মের মানুষ। তবে গ্রাম এলাকায় এখনো বাপ-দাদার ঐতিহ্যবাহী গোলা রক্ষায় ধনী শ্রেণীর কৃষকরা বাঁশের তৈরি গোলা ধরে রেখেছেন। বাস্তবতা বড়ই নিষ্ঠুর। আগামী প্রজন্মের কাছে গোলা ঘর একটি স্মৃতিতে পরিণত হয়েছে। আধুনিক গুদাম ঘর ধানচাল রাখার জায়গা দখল করছে। ফলে গোলা ঘরের ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে।

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
আমাদের পেজ লাইক করুন