
বিশেষ প্রতিনিধি : এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, “ফলাফল মানে শুধুই একটি পরিসংখ্যান নয়; এটি একটি পরিবার, আশা, পরিশ্রম এবং ভবিষ্যতের গল্প।” তিনি বলেন, আজকের দিনটি সহজ নয়—না শিক্ষার্থীদের জন্য, না অভিভাবকদের জন্য, আর না শিক্ষা প্রশাসনের জন্য।২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৫৮.৮৩ শতাংশ, যেখানে গত বছর এই হার ছিল ৭৭.৭৮ শতাংশ। অর্থাৎ, এবার পাসের হার কমেছে ১৮.৯৫ শতাংশ। এ বছর জিপিএ–৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন শিক্ষার্থী, যা আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম।শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, “যাদের ফল প্রত্যাশামতো হয়নি, আমি তাদের প্রতি সহানুভূতি জানাই। আমি জানি হতাশা আছে, কিন্তু বিশ্বাস করি এই মুহূর্তটিও শেখার অংশ। পরিশ্রম কখনোই বৃথা যায় না।
‘বাস্তবতা বিকৃত নয়, বরং স্বীকার করতে শিখি’ফলাফলের এই পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অধ্যাপক আবরার বলেন, “এর উত্তর জটিল নয় বরং সহজ, কিন্তু অস্বস্তিকর। বাংলাদেশে শেখার সংকট শুরু হয় খুব প্রাথমিক স্তর থেকেই। সেই ঘাটতি দীর্ঘদিন ধরে সঞ্চিত হয়েছে। কিন্তু আমরা অনেক সময় এই বাস্তবতার মুখোমুখি হতে চাইনি।”তিনি আরও বলেন, “আমরা এমন একটি শিক্ষা সংস্কৃতি গড়ে তুলেছি যেখানে সংখ্যাই সত্য হয়ে উঠেছে। পাশের হারকে সাফল্যের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়েছে, জিপিএ–৫–এর সংখ্যাকে তৃপ্তির মানদণ্ডে পরিণত করা হয়েছে। ফল ‘ভালো’ দেখাতে গিয়ে আমরা অজান্তেই শেখার প্রকৃত সংকট আড়াল করেছি। এখন সময় এসেছে সেই সংস্কৃতি বদলের।
‘অতিরিক্ত নম্বর নয়, ন্যায্য নম্বরই হোক সততার মানদণ্ড’
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, “আমি সব শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছি—যাতে ভবিষ্যতের পরীক্ষায়, বিশেষ করে এইচএসসিতে, সীমান্তরেখায় থাকা শিক্ষার্থীদের প্রতি ন্যায্যতা বজায় রাখা হয়। তবে, ফলাফলের বাস্তবতা যেন বিকৃত না হয়। আমরা ‘অতিরিক্ত নম্বর দিয়ে সন্তুষ্টি’ নয়, বরং ‘ন্যায্য নম্বর দিয়ে সততা’কে বেছে নিয়েছি।”তিনি স্বীকার করেন, এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ ছিল না। তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি অন্যায় এড়াতে এই পরিবর্তন জরুরি। “আজ যদি সাহস করে বাস্তবতা স্বীকার না করি, তাহলে আমরা মেধাবীদের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি অবিচার করব,”—বললেন তিনি।
ফল নয়, আত্মসমালোচনার সুযোগ শিক্ষা উপদেষ্টা স্পষ্ট করে বলেন, “এই ফলাফলকে আমি ব্যর্থতা হিসেবে দেখি না, বরং আত্মসমালোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হিসেবে দেখি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন হিসেবে আমি আমাদের সম্পূর্ণ ব্যবস্থাকে মূল্যায়নের আওতায় আনতে চাই।”
বিশেষজ্ঞ প্যানেল ও শিক্ষা বোর্ডগুলোর পর্যালোচনা নির্দেশ শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে শিক্ষা উপদেষ্টা জানান, প্রতিটি শিক্ষা বোর্ডকে তাদের নিজ নিজ মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার স্বতন্ত্র পর্যালোচনা রিপোর্ট তৈরি করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষাবিদ, গবেষক ও নীতিনির্ধারকদের সমন্বয়ে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করা হচ্ছে, যারা বিশ্লেষণ করে শেখার ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করবেন। তিনি বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য অভিযোগ নয়, বরং সমাধান খোঁজা।”এইচএসসি–২০২৫ এর ফলাফল শুধুমাত্র সংখ্যা নয়—এটি একটি গভীরতর শিক্ষা বাস্তবতার প্রতিফলন। ফলাফলের পেছনের সংকট ও ভবিষ্যৎ উন্নয়নের রূপরেখা নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার এই সাহসী বক্তব্য শিক্ষাব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।